সামুদ্রিক জোয়ারের ধাক্কায় কক্সবাজারের টেকনাফ সৈকতের ঝাউগাছ উপড়ে পড়ছে।

সামুদ্রিক জোয়ারের ধাক্কায় কক্সবাজারের টেকনাফ সৈকতের ঝাউগাছ উপড়ে পড়ছে। মাটি সরে গিয়ে উপড়ে পড়ার ঝুঁকিতে আছে আরও কয়েক হাজার গাছ। এতে ঝুঁকির মুখে পড়েছে সাবরাংয়ের অর্থনৈতিক অঞ্চল।
কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক মো. আলী হোসেন বলেন, সমুদ্রের ঢেউয়ের আঘাতে সাবরাং অর্থনৈতিক অঞ্চলসংলগ্ন ঝাউবাগান বিলীন হচ্ছে। অঞ্চলটি রক্ষার জন্য টেকসই বেড়িবাঁধ নির্মাণ জরুরি। এ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য এক বছর আগে বাংলাদেশ অর্থনৈতিক অঞ্চল কর্তৃপক্ষের (বেজা) কাছে ১ হাজার ১৪৭ একর জমি হস্তান্তর করা হয়েছে। বেজার তত্ত্বাবধানে সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগ সেখানে সড়ক উন্নয়নের কাজ করছে।
সওজের কক্সবাজারের নির্বাহী প্রকৌশলী রানাপ্রিয় বড়ুয়া বলেন, সাবরাং প্রকল্প দেখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সচিব আগামী বৃহস্পতিবার টেকনাফ যাচ্ছেন। এরপর ঝাউবাগানসহ অঞ্চলটি রক্ষার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উপকূলীয় বন বিভাগ সূত্র জানায়, সাবরাং সৈকতে ২০১১-১২ সালে ১০ হেক্টর ভূমিতে প্রায় ২৫ হাজার গাছ, ২০১৩-১৪ সালে ৫ হেক্টর ভূমিতে সাড়ে ১২ হাজার গাছ সৃজন করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ২৫ হাজার গাছ নেই।
গতকাল সোমবার সরেজমিনে দেখা যায়, জোয়ারের ধাক্কায় সাবরাং ইউনিয়নের কাটাবুনিয়া ও মুন্ডারডেল এলাকার বিশাল ঝাউবাগান বিলীন হয়ে যাচ্ছে। গাছের গোড়া থেকে বালু সরে গিয়ে শত শত গাছ উপড়ে পড়ছে। উপড়ে পড়া গাছ অনেকে কেটে নিয়ে যাচ্ছে।
কাটাবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা মো. জিয়াবুল (২৭), আবদুর রহমান (৩৮) ও কবির আহমদ (২৬) বলেন, ইতিমধ্যে ২৫ হাজারের মতো গাছ উপড়ে পড়েছে।
উপকূলীয় বন বিভাগের টেকনাফের রেঞ্জ কর্মকর্তা ও টেকনাফ সদরের বিট কর্মকর্তা মো. নাছির উদ্দিন আহমদ বলেন, জনবলসংকটের কারণে সৈকতে সৃজিত ঝাউবাগান রক্ষা করা যাচ্ছে না। রাতের বেলায় চোরের দল গাছ কেটে নিচ্ছে। অন্যদিকে জোয়ারের ধাক্কায় গাছগুলো উপড়ে পড়ছে। তিনি বলেন, উপড়ে পড়া গাছগুলো তুলে নেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, কয়েক দিন পর শুরু হচ্ছে অমাবস্যা। অমাবস্যার সময় জোয়ারের পানি স্বাভাবিকের চেয়ে কয়েক ফুট উচ্চতায় বৃদ্ধি পায়। এ সময় অবশিষ্ট ঝাউগাছও উপড়ে পড়ার আশঙ্কা আছে। এতে সাবরাং অর্থনৈতিক অঞ্চল ঝুঁকির মুখে পড়বে।
টেকনাফ সদর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান মিয়া ও সাবরাং ইউপির চেয়ারম্যান নূর হোসেন বলেন, সাবরাং অর্থনৈতিক অঞ্চলসহ অবশিষ্ট ঝাউবাগান রক্ষা করতে হলে জরুরি ভিত্তিতে বেড়িবাঁধ নির্মাণ করতে হবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ঝাউগাছ উপড়ে পড়ার বিষয়টি তিনি জেলা প্রশাসকসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছেন।
পরিবেশ অধিদপ্তর কক্সবাজারের সহকারী পরিচালক সর্দার শরিফুল ইসলাম বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি পেয়ে ঢেউ উপকূলে আঘাত হানছে। এতে ঝাউবাগান বিলীন হয়ে যাচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments