কিয়ামতের দিন হাশরের ময়দানের অবস্থা কেমন হবে

ফাইল ছবি

হাশর আরবি শব্দ, অর্থ সমাবেশ, ভিড়, একত্র হওয়া, জড়ো হওয়া ইত্যাদি। সমাবেশ বা একত্র   হওয়ার দিবসের বিভিন্ন নাম আছে। যেমন—ইয়াউমুল হিসাব—হিসাবের দিবস, ইয়াউমুল জাযা—প্রতিদান দিবস, ইয়াওমুল মিয়াদ—প্রতিশ্রুত দিবস, ইয়াওমুল জাময়ে—একত্র হওয়ার দিবস, ইয়াওমুল মাহশার—সমাবেশ দিবস ইত্যাদি। যে মাঠে সমাবেশ ঘটবে, তাকে বলা হয় ময়দানে মাহশার বা সমাবেশের স্থল।
পরকালে বিচারের জন্য কবর থেকে উত্থিত হয়ে সব প্রাণী এ মাঠে দণ্ডায়মান থাকবে। পৃথিবীই হবে হাশরের মাঠ। হাদিসের ভাষ্য মতে, পৃথিবীর উপরিভাগে একটি চাদর রয়েছে, একে পার্শ্ব ধরে টান দেওয়া হবে। ফলে গাছপালা, পাহাড়-পর্বত সাগরে পতিত হবে। অতঃপর সমতল হয়ে যাবে। আল্লাহর বাণী—আর আমি জমিনের উপরিভাগকে (বিচার দিবসে) উদ্ভিদশূন্য মাটিতে পরিণত করে দেব। (সুরা : কাহাফ, আয়াত : ৮)
কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়ার মাধ্যমে পৃথিবীর সবকিছু ধ্বংস হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা হরজত ইসরাফিল আলাইহিস সালামে সিঙ্গায় দ্বিতীয়বার ফুৎকার দেয়ার নির্দেশ দিবেন। সে নির্দেশে পৃথিবীর শুরু থেকে কিয়ামত অনুষ্ঠিত হওয়া পর্যন্ত সব মানুষ আবার জীবত হবে। সবার মাঝে থাকবে চরম পেরেশানী। সবাই মুক্তির অপেক্ষায় আত্মহারা পাগলপারা অবস্থায় সময় কাটাবে। সে সময়ের অবস্থা বর্ণনা ইমাম ইবনে জারির রহমাতুল্লাহি আলাইহি একটি হাদিস এনেছিন। যা হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু হাদিসটি বর্ণনা করেছেন।
যখন সব মানুষ ভীত ও সন্ত্রস্ত হয়ে পড়বে; তখন তারা নবিদের নিকট সুপারিশ জানাবে। হজরত আদম আলাইহিস সালাম থেকে শুরু করে এক একজন নবির কাছে তারা যাবে এবং প্রত্যেকের কাছে তারা পরিস্কার জবাব (প্রত্যেকেই সাহায্য করার ব্যাপারে সুস্পষ্ট অপরগতা প্রকাশ করবে।) পেয়ে ফিরে আসবে।
অবশেষে সব মানুষ সাহায্য লাভের সুপারিশ নিয়ে বিশ্বনবি হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নিকট পৌঁছবে। তিনি উত্তর দিবেন, আমি প্রস্তুত আছি। আর আমিই তার (এ কাজের) অধিকারী।
অতঃপর তিনি (বিশ্বনবি আরশের নিকট) যাবেন এবং আরশের নিচে সিজদায় পড়ে যাবেন। তিনি আল্লাহ তাআলার নিকট সুপারিশ করবেন যে, তিনি (আল্লাহ) যেন বান্দাদের ফয়সালার জন্য আগমন করেন।
আল্লাহ তাআলা তাঁর (বিশ্বনবির) সুপারিশ কবুল করবেন এবং মেঘমালার ছায়াতলে সমাগত হবেন।
দুনিয়ার আকাশও ফেটে যাবে এবং দুনিয়ার সব ফেরেশতাও এসে যাবে। অতঃপর দ্বিতীয় আকাশও ফেটে যাবে, সেখানের ফেরেশতারাও এসে যাবে। এভাবে সাতটি আকাশ ফেটে যাবে এবং সব ফেরেশতা এসে উপস্থিত হবে।
অতঃপর আল্লাহ তাআলার আরশ থেকে নেমে আসবে, সম্মানিত ফেরেশতাগণ (আগে) অবতরণ করবেন অতঃপর স্বয়ং মহা পরাক্রমশালী আল্লাহ তাআলা আগমন করবেন।
আরশে আজিম থেকে হাশরের ময়দানে আল্লাহ তাআলার আগমনের সময় সব ফেরেশতা এ তাসবিহ পাঠে ব্যস্ত হয়ে পড়বেন।
হজরত আবু বারযা আসলামি রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘কিয়ামতের দিন বান্দার দুটি পা ততক্ষণ পর্যন্ত নড়াতে পারবে না; যতক্ষণ না তাকে জিজ্ঞাসা করা হবে যে, তোমার জিন্দিগি কোথায় ব্যয় করেছ? জ্ঞানানুসারে কি আমল করেছ? সম্পদ কোথা থেকে উপার্জন করেছ আর কিসে খরচ করেছ এবং তোমার শরীরকে কী কাজে নিঃশেষ করেছ?’ (তিরমিজি, দারেমি) হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, হাশরের ময়দানে প্রত্যেক বনি আদমকেই আল্লাহ তাআলার দরবারে তার কর্মের হিসাব দিতে হবে। হাশরের ময়দানে হিসাব-নিকাশ হবে দু ধরনের।
হাশরের ময়দানের অবস্থাঃ
হাশরের ময়দানের বর্ণনা দিতে গিয়ে মহানবী (সা.) বলেন, ‘কিয়ামতের দিন মানবমণ্ডলীকে লাল শ্বেত মিশ্রিত এমন এক সমতল ভূমিতে একত্র করা হবে, যেন তা পরিচ্ছন্ন আটার রুটির মতো। ওই জমিনে কারো (বাড়িঘরের বা অন্য কিছুর) চিহ্ন থাকবে না।’ (বুখারি ও মুসলিম) হাশরের ময়দানের ভূমি সম্পর্কে কোরআনে এসেছে, ‘(বিচার দিবসে) আল্লাহ জমিনকে এমন সমতল মসৃণ ধূসর ময়দানে পরিণত করবেন যে তুমি তাতে কোনো বক্রতা ও উচ্চতা দেখতে পাবে না।’ (সুরা : তাহা, আয়াত : ১০৬-১০৭)
কিয়ামতের দিনটি প্রচণ্ড উত্তপ্ত থাকবে। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘বিচার দিবসে সূর্যকে মানুষের কাছে আনা হবে, তা হবে তাদের থেকে এক ফরসাখ (তিন মাইল) দূরে। ব্যক্তির আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে অবস্থান করবে। কারো ঘাম হবে টাখনু সমান, কারো হাঁটু সমান, কারো কোমর সমান, কারো মুখ সমান (মিশকাত, পৃষ্ঠা ৪৮৩)
হাশরের ময়দানে একটু সুপারিশের জন্য সবাই একে অন্যের কাছে ঘুরবে। হাদিস শরিফে এসেছে, ‘হাশরের ময়দানে মানুষ হজরত আদম (আ.)-এর কাছে গিয়ে বলবে, আপনার সন্তানদের জন্য সুপারিশ করুন, তিনি তখন বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, তোমরা ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে যাও, কারণ তিনি আল্লাহর বন্ধু। অতঃপর মানুষ ইবরাহিম (আ.)-এর কাছে আসবে। তিনি তখন বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, বরং তোমরা মুসা (আ.)-এর কাছে যাও। কারণ তিনি কালিমাতুল্লাহ তথা আল্লাহর সঙ্গে কথা বলেছেন। অতঃপর তারা মুসা (আ.)-এর কাছে আসবে। তিনি বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, বরং তোমরা ঈসা (আ.)-এর কাছে যাও। কারণ তিনি রুহুল্লাহ। অতঃপর মানুষ তাঁর কাছে আসবে। তিনি তখন বলবেন, আমি এর যোগ্য নই, বরং তোমরা মুহাম্মদ (সা.)-এর কাছে যাও। অতঃপর মানুষ তাঁর কাছে আসবে, তিনি তখন বলবেন, হ্যাঁ, আমি এর যোগ্য, আমি সুপারিশ করব।’ (কুরতুবি, ১০ম খণ্ড, ২৩৬ পৃষ্ঠা)

Post a Comment

0 Comments