অস্টম শ্রেনী = অধ্যায় ১, "প্রানী জগত শ্রেনী বিন্যাস"


{{toc_jsc_science}}

পৃথিবীতে অসংখ্য বিচিত্র ছোট বড় প্রাণী বাস করে। এদের মধ্যে রয়েছে নানা রকম মিল ও অমিল। এই বৈচিত্র্যময়
প্রাণিকূলে রয়েছে অণুবীক্ষণিক প্রাণী, অ্যামিবা থেকে শুরু করে বিশাল আকারের তিমি। প্রাণীর বিভিন্নতা নির্ভর করে
পরিবেশের বৈচিত্র্যের উপর। ভিন্ন ভিন্ন পরিবেশ ও বাসস্থানে প্রাণিবৈচিত্র্য ভিন্ন রকম হয়। বিশাল এই প্রাণিজগৎ
সম্পর্কে জানা অত্যন্ত কষ্টসাধ্য। সহজে সু-শৃঙ্খলভাবে বিশাল প্রাণিজগৎকে জানার জন্য এর বিন্যস্তকরণ প্রয়োজন,
আর বিন্যস্ত করার পদ্ধতিকে শ্রেণিবিন্যাস বলে। শ্রেণিবিন্যাস প্রাণিজগৎকে জানার পথ সহজ করে দিয়েছে।<br>
[[File:001.JPG|500px|frameless|center]]
'''এ অধ্যায় পাঠ শেষে আমরা-'''
* অমেরুদণ্ডী প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস করতে পারব।
* মেরুদণ্ডী প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস করতে পারব।
* জীবজগতের শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা করতে পারব।
'''পাঠ ১'''<br>
তোমরা তোমাদের চারপাশের ছোট-বড় নানা বৈচিত্র্যপূর্ণপ্রাণী দেখতে পাও। তোমাদের ষষ্ঠ শ্রেণিতে অর্জিত জ্ঞানের
ভিত্তিতে প্রাণিজগত সম্পর্কে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দেওয়ার চেষ্টা কর। তোমার দেখা প্রাণীগুলো দেখতে কী একই
রকম? এদের সবগুলোরই কি [[মেরুদণ্ড]] আছে? এরা সবাই কি একই পরিবেশে বাস করে? এরা সবাই কি একই রকম
খাবার খায়? এরা কি একই রকমভাবে চলাফেরা করে?<br>
এবার তুমি নিচের উত্তরগুলোর সাথে তোমার চিন্তাকে মিলিয়ে নাও। আমাদের চারপাশে আমরা যে প্রাণীগুলোকে দেখি
তারা সবগুলো দেখতে এক রকম হয় না। এদের দেহের আকৃতি, গঠন ও অন্যান্য জৈবিক কাজকর্মের প্রকৃতিও ভিন্ন।
এদের কোনোটির মেরুদণ্ড আছে, আবার কোনোটির মেরুদণ্ড নেই। এদের কোনোটা মাটিতে, কোনোটা পানিতে,
কোনোটা গাছে বাস করে। এদের খাদ্যও বিভিন্ন প্রকারের হয়। এরা বিভিন্ন অঙ্গ দিয়ে চলাফেরা (সিলিয়া, পা, উপাঙ্গ
ইত্যাদি) করে, আবার কোনোটার চলনশক্তি নেই।<br>

পৃথিবীতে এ রকম বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণীর সংখ্যা আমাদের সঠিক জানা নেই। আজ পর্যন্ত ১৫ লক্ষ প্রজাতির প্রাণী আবি®কৃত
হয়েছে এবং প্রতিনিয়ত এদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। বিপুল সংখ্যক প্রাণীর গঠন ও প্রকৃতি সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জনের
একমাত্র উপায় হলো শ্রেণিবিন্যাস। প্রাণিদেহে বিদ্যমান বিভিন্ন বৈশিষ্ট্য ও বিভিন্ন প্রাণীর মধ্যে মিল, অমিল ও পরস্পরের
মধ্যে যে সম্পর্ক রয়েছে তার উপর ভিত্তি করে শ্রেণিবিন্যাস করা হয়। এদের বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী বিভিন্ন স্তর বা ধাপে
পর্যায়ক্রমে সাজানো হয়। জীবজগৎকে এই ধাপে ধাপে বিন্যস্ত করার পদ্ধতিকে শ্রেণিবিন্যাস বলে। প্রয়োজনের তাগিদে
বর্তমানে জীববিজ্ঞানের একটি স্বতন্ত্র শাখা গড়ে উঠেছে। এর নাম শ্রেণিবিন্যাস বিদ্যা।<br>
প্রজাতি হলো শ্রেণিবিন্যাসের সবচেয়ে নিচের ধাপ বা একক। যেমন- মানুষ, কুনোব্যাঙ, কবুতর ইত্যাদি এক একটি
প্রজাতি। কোনো প্রাণীর শ্রেণিবিন্যাস করতে হলে সেই প্রাণীকে বৈশিষ্ট্য অনুযায়ী ধাপে ধাপে সাজাতে হয়। এই সকল
ধাপের প্রত্যেকটিকে যথাযথভাবে বিন্যস্ত করতে হয়।<br>
শ্রেণিবিন্যাসের ইতিহাসে অ্যারিস্টটল, জন রে ও ক্যারোলাস লিনিয়াসের নাম উলে- খযোগ্য। প্রকৃতিবিজ্ঞানী ক্যারোলাস
লিনিয়াসকে শ্রেণিবিন্যাসের জনক বলা হয়। তিনিই সর্বপ্রথম প্রজাতির বৈশিষ্ট্য চিহ্নিত করেন এবং দ্বিপদ বা দুই অংশ
বিশিষ্ট নামকরণ প্রথা প্রবর্তন করেন। একটি প্রাণীর বৈজ্ঞানিক নাম দুই অংশ বা পদবিশিষ্ট হয়। এই নামকরণকে
দ্বিপদ নামকরণ বা বৈজ্ঞানিক নামকরণ বলে। যেমন- মানুষের বৈজ্ঞানিক নাম - Homo sapians. বৈজ্ঞানিক নাম
ল্যাটিন অথবা ইংরেজি ভাষায় লিখতে হয়।<br>
এবার তুমি তোমার নিজের খাতায় নিচের ছকটি আঁক। এবার ছকটি পূরণ কর।
{| class="wikitable"
|-
! প্রাণীর নাম !! বাসস্থান !! গঠন !! উপকারিতা !! অপকারিতা
|-
| বানর || || || ||
|-
| কেঁচো || || || ||
|-
| ঝিনুক || || || ||
|-
| পাখি || || || ||
|-
| মাছ || || || ||
|}
   

'''নতুন শব্দ-''' শ্রেণিকরণ বিদ্যা, দ্বি-পদ নামকরণ, প্রজাতি।<br>
'''পাঠ ২-৫'''<br>
প্রাণিজগৎকে কিংডম বলা হয়। বর্তমানে আধুনিক শ্রেণিবিন্যাসে প্রোটোজোয়া প্রাণীদের আলাদা উপজগৎ (Sub
kingdom)-এ ভাগ করা হয়। অন্যান্য প্রাণীদেরকে অ্যানিম্যালিয়া (Animalia) জগতের অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
অ্যানিম্যালিয়া জগতকে নয়টি পর্বে ভাগ করা হয়েছে।<br>
'''১। পর্ব - পরিফেরা (Porifera)'''<br>
'''স্বভাব ও বাসস্থান :''' পরিফেরা পর্বের প্রাণীরা সাধারণভাবে স্পঞ্জ নামে পরিচিত। পৃথিবীর সর্বত্রই এদের পাওয়া যায়।
এদের অধিকাংশ প্রজাতি সামুদ্রিক। তবে কিছু কিছু প্রাণী স্বাদু পানিতে বাস করে। এরা সাধারণত দলবদ্ধ হয়ে বসবাস
করে।<br>

'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:003.JPG|250px|thumbnail|right|চিত্র ১.১ : স্পনজিলা]]
(১) এরা সরলতম বহুকোষী প্রাণী।<br>
(২) এদের দেহপ্রাচীর অসংখ্য ছিদ্রযুক্ত। এই ছিদ্রপথে পানির সাথে
অক্সিজেন ও খাদ্যবস্তু প্রবেশ করে।<br>
(৩) এদের কোনো পৃথক সুগঠিত কলা, অঙ্গ ও তন্ত্র থাকে না।<br>
উদাহরণ : স্পনজিলা, স্কাইফা<br>
২। পর্ব- নিডারিয়া (Cnidaria) : এই পর্ব ইতোপূর্বে সিলেন্টারোটা নামে পরিচিত ছিল।<br>
'''স্বভাব ও বাসস্থান''' : পৃথিবীর প্রায় সকল অঞ্চলে এই প্রজাতির প্রাণী দেখা যায়। এদের অধিকাংশ প্রজাতি সামুদ্রিক।<br>
তবে অনেক প্রজাতি খাল, বিল, নদী, হ্রদ, ঝরনা ইত্যাদিতে দেখা যায়। এই পর্বের প্রাণীগুলো বিচিত্র বর্ণ ও আকারআকৃতির হয়। এদের কিছু প্রজাতি এককভাবে আবার কিছু প্রজাতি দলবদ্ধভাবে কলোনি গঠন করে বাস করে। এরা
সাধারণত পানিতে ভাসমান কাঠ, পাতা বা অন্য কোনো কিছুর সঙ্গে দেহকে আটকে রেখে বা মুক্তভাবে সাঁতার কাটে।<br>
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্'''<br>
[[File:002.JPG|250px|frameless|right]]
(১) এদের দেহ দুটি ভ্রণীয় কোষস্তর দ্বারা গঠিত। দেহের বাইরের
দিকের স্তরটি এক্টোডার্ম এবং ভিতরের স্তরটি এন্ডোডার্ম।<br>
(২) এদের দেহ গহ্বরকে সিলেন্টেরন বলে। এটা একাধারে পরিপাক
ও সংবহনে অংশ নেয়।<br>
(৩) একটোডার্মে নিডোব্লাস্ট নামে এক বৈশিষ্ট্যপূর্ণ কোষ থাকে। এই
কোষগুলো শিকার ধরা, আত্মরক্ষা, চলন ইত্যাদি কাজে অংশ নেয়।<br>
উদাহরণ : হাইড্রা, ওবেলিয়া।<br>
'''৩। পর্ব- প্লাটিহেলমিনথিস (Platyhelminthes)'''<br>
স্বভাব ও বাসস্থান : এ পর্বের প্রাণীগুলোর জীবনযাত্রা বেশ বৈচিত্র্যময়। এ পর্বের বহু প্রজাতি বহিঃপরজীবী বা
অন্তঃপরজীবী হিসেবে অন্য জীবদেহের বাইরে বা ভিতরে বসবাস করে। তবে কিছু প্রজাতি মুক্তজীবী হিসেবে স্বাদু
পানিতে আবার কিছু প্রজাতি লবণাক্ত পানিতে বাস করে। এই পর্বের কোনো কোনো প্রাণী ভেজা ও স্যাঁতসেঁতে মাটিতে
বাস করে।<br>
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:004.JPG|250px|frameless|right]]
(১) এদের দেহ চ্যাপ্টা, এরা উভলিঙ্গ ও অন্তঃপরজীবী।<br>
(২) দেহ কিউটিকেল দ্বারা আবৃত।<br>
(৩) দেহে চোষক ও আংটা থাক<br>
(৪) দেহে শিখা কোষ নামে বিশেষ কোষ থাকে, এগুলো রেচন অঙ্গ হিসেবে কাজ করে।<br>
(৫) পৌষ্টিকতন্ত্র অসম্পূর্ণ।<br>
'''উদাহরণ''' : ফিতাকৃমি, যকৃত কৃমি।<br>
'''৪। পর্ব : নেমাটোডা (Nematoda) :''' অনেকে একে নেমাথেলমিনথিস বলে।<br>
স্বভাব ও বাসস্থান : এই পর্বের অনেক প্রাণী অন্তঃপরজীবী হিসেবে প্রাণীর অন্ত্র ও রক্তে বসবাস করে। আবার এ পর্বের
অনেক প্রাণীই মুক্তজীবী। এরা পানি ও মাটিতে বাস করে।<br>
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:005.JPG|250px|frameless|right]]
(১) দেহ নলাকার ও পুরু ত্বক দ্বারা আবৃত।<br>
(২) পৌষ্টিক নালি সম্পূর্ণ, মুখ ও পায়ু ছিদ্র উপস্থিত।<br>
(৩) শ্বসনতন্ত্র ও সংবহনতন্ত্র অনুপস্থিত।<br>
(৪) সাধারণত একলিঙ্গ।<br>
(৫) দেহ গহ্বর অনাবৃত ও প্রকৃত সিলোম নাই।<br>
উদাহরণ : কেঁচো কৃমি, ফাইলেরিয়া কৃমি।<br>
'''গুরুত্ব''' : এই পর্বের অধিকাংশ প্রাণী পরজীবী হিসেবে বিভিন্ন প্রাণী
ও মানবদেহে বাস করে নানারকম ক্ষতি সাধন করে।<br>
'''৫। পর্ব- অ্যানেলিডা (Annelida)'''<br>
স্বভাব ও বাসস্থান : পৃথিবীর প্রায় সকল নাতিশীতোষ্ণ ও উষ্ণমন্ডলীয় অঞ্চলে এ পর্বের প্রাণীদের পাওয়া যায়। এদের
বহু প্রজাতি স্বাদু পানিতে এবং বহু প্রজাতি সমুদ্রে বাস করে। এই পর্বের বহু প্রাণী স্যাঁতসেঁতে মাটিতে বসবাস করে।
কিছু প্রজাতি পাথর ও মাটিতে গর্ত খুঁড়ে বসবাস করে।<br>
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:006.JPG|250px|frameless|right]]
(১) এদের দেহ নলাকার ও খণ্ডায়িত।<br>
(২) নেফ্রিডিয়া নামক রেচন অঙ্গ থাকে।<br>
(৩) প্রতিটি খন্ডে সিটা থাকে। সিটা চলাচলে সহায়তা করে।<br>
'''উদাহরণ :''' কেঁচো ও জোঁক।<br>
'''৬। পর্ব- আর্থ্রোপোডা (Arthropoda)'''<br>
'''স্বভাব ও বাসস্থান :''' এই পর্বটি প্রাণিজগতের সবচেয়ে বৃহত্তম পর্ব। এরা পৃথিবীর প্রায় সর্বত্র সকল পরিবেশে বাস
করতে সক্ষম। এদের বহু প্রজাতি অন্তঃ ও বহিঃ পরজীবী হিসেবে বাস করে। বহু প্রাণী স্থলে, স্বাদু পানি ও সমুদ্রে
(চিত্র ১.৫ : কেঁচো, জোঁক) বাস করে। এ পর্বের অনেক প্রজাতির প্রাণী ডানার সাহায্যে উড়তে পারে।

চিত্র ১.৫ : কেঁচো, জোঁক
প্রাণিজগতের শ্রেণিবিন্যাস ৫
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
(১) দেহ খন্ডায়িত ও সন্ধিযুক্ত উপাঙ্গ বিদ্যমান।
(২) মাথায় একজোড়া পুজ্ঞাক্ষি ও অ্যান্টেনা থাকে।
(৩) নরম দেহ শক্ত কাইটিন সমৃদ্ধ শক্ত আবরণী দ্বারা আবৃত।
(৪) এদের দেহের রক্তপূর্ণ গহ্বর হিমোসিল নামে পরিচিত।
'''উদাহরণ :''' প্রজাপতি, চিংড়ি, আরশোলা, কাঁকড়া।
'''৭। পর্ব- মলাস্কা (Mollusca)'''
'''স্বভাব ও বাসস্থান :''' এ পর্বের প্রাণীদের গঠন, বাসস্থান ও স্বভাব বৈচিত্র্যপূর্ণ। এরা পৃথিবীর প্রায় সকল পরিবেশে বাস
করে। এরা সামুদ্রিক এবং সাগরের বিভিন্ন স্তরে বাস করে। কিছু কিছু প্রজাতি পাহাড় অঞ্চলে, বনেজঙ্গলে ও স্বাদু
পানিতে বাস করে।<br>
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:0081.7.JPG|250px|frameless|right]]
(১) এদের দেহ নরম। নরম দেহটি সাধারণত শক্ত খোলস দ্বারা আবৃত থাকে।<br>
(২) পেশিবহুল পা দিয়ে এরা চলাচল করে।<br>
(৩) ফুসফুস বা ফুলকার সাহায্যে শ্বসনকার্য চালায়।<br>
'''উদাহরণ :''' শামুক ও ঝিনুক।<br>
'''৮। পর্ব- একাইনোডারমাটা (Echinodermata)'''<br>
স্বভাব ও বাসস্থান : এ পর্বের সকল প্রাণী সামুদ্রিক। এদের স্থলে বা মিঠা পানিতে পাওয়া যায় না। এরা অধিকাংশ
মুক্তজীবী।<br>
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:0091.8.JPG|250px|frameless|right]]
(১) এদের দেহত্বক কাঁটাযুক্ত।<br>
(২) দেহ পাঁচটি সমান ভাগে বিভক্ত।<br>
(৩) এদের পানি সংবহনতন্ত্র থাকে এবং নালী পদের সাহায্যে চলাচল করে।<br>
(৪) পূর্ণাঙ্গ প্রাণীতে মাথা, অঙ্কীয় ও পৃষ্ঠদেশ নির্ণয় করা যায় না।<br>
'''উদাহরণ :''' তারামাছ, সমুদ্র শশা।<br>
নতুন শব্দ : সিলোম, সিলেন্টেরন, হিমোসিল, সিটা, পানি সংবহনতন্ত্র, শিখাকোষ।<br>

'''৯। পর্ব-কর্ডাটা (Chordata)'''<br>
স্বভাব ও বাসস্থান : এরা পৃথিবীর সকল পরিবেশে বাস করে। এদের বহু প্রজাতি ডাঙ্গায় বাস করে। জলচর কর্ডাটাদের

মধ্যে বহু প্রজাতি স্বাদু পানিতে অথবা সমুদ্রে বাস করে। বহু প্রজাতি বৃক্ষবাসী, মরুবাসী, মেরুবাসী, গুহাবাসী ও খেচর
জীবনযাপন করে। কর্ডাটা পর্বের বহু প্রাণী বহিঃপরজীবী হিসেবে অন্য প্রাণীর দেহে সংলগ্ন হয়ে জীবনযাপন করে।<br>
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:0101.9.JPG|250px|frameless|right]]
(১) নটোকর্ড হলো একটা নরম নমনীয়, দণ্ডাকার দৃঢ় অখণ্ডায়িত অঙ্গ। এই পর্বের কোনো কোনো প্রজাতির প্রাণীর
সারা জীবন অথবা ভ্রণ অবস্থায় পৃষ্ঠীয়দেশ বরাবর নটোকর্ড অবস্থান করে।<br>
(২) পৃষ্ঠদেশে একক, ফাঁপা মেরুরজ্জু থাকে।<br>
(৩) সারা জীবন অথবা জীবন চক্রের কোনো এক পর্যায়ে পার্শ্বীয় গলবিলীয় ফুলকা ছিদ্র থাকে।<br>
'''উদাহরণ :''' মানুষ, কুনোব্যাঙ, রুই মাছ।<br>
কর্ডাটা পর্বকে তিনটি উপপর্বে ভাগ করা যায়। যথা-<br>
'''ক. ইউরোকর্ডাটা (Urochordata)'''<br>
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:1101.10.JPG|250px|frameless|right]]
১. প্রাথমিক অবস্থায় ফুলকা রন্ধ্র, পৃষ্ঠীয় ফাঁপা মেরুরজ্জু থাকে।<br>
২. এদের লেজে নটোকর্ড থাকে।<br>
'''উদাহরণ :''' অ্যাসিডিয়া।<br>
'''খ. সেফালোকর্ডাটা (Cephalochordata)'''<br>
১. নটোকর্ড এদের দেহের সম্মুখভাগে অবস্থান করে।<br>
২. সারাজীবনই নটোকর্ডের উপস্থিতি লক্ষ করা যায়।<br>
'''উদাহরণ :''' ব্রাঙ্কিওস্টোমা<br>
'''গ. ভার্টিবরাটা (Vertebrata)'''<br>
এই উপ-পর্বের প্রাণীরাই মেরুদণ্ডী প্রাণী হিসেবে পরিচিত। গঠন ও বৈশিষ্ট্যের ভিত্তিতে মেরুদণ্ডী প্রাণীদের ৭টি শ্রেণিতে
ভাগ করা হয়েছে।<br>
'''১। শ্রেণি- সাইক্লোস্টোমাটা (Cyclostomata)'''<br>
(ক) লম্বাটে দেহ।<br>
(খ) মুখছিদ্র চোয়ালবিহীন ও চোষকযুক্ত।<br>
(গ) এদের দেহে আঁইশ বা যুগ্ম পাখনা অনুপস্থিত।<br>
'''উদাহরণ :''' পেট্রোমাইজন।<br>

'''২। শ্রেণি- কনড্রিকথিস (Chondrickthyes)'''<br>
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:01.11.JPG|250px|frameless|right]]
(ক) এই পর্বের সকল প্রাণী সমুদ্রে বাস করে।<br>
(খ) কঙ্কাল তরুণাস্থিময়।<br>
(গ) এদের দেহ পযাকয়েড আঁইশ দ্বারা আবৃত, মাথার
দুই পাশে ৫-৭ জোড়া ফুলকা ছিদ্র থাকে।<br>
(ঘ) এদের কানকো থাকে না।<br>
উদাহরণ : হাঙ্গর, করাত মাছ।<br>
'''৩। শ্রেণি- অস্টিকথিস (Ostichthyes)'''<br>
[[File:1.13.JPG|250px|frameless|right]]
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:1.12.JPG|250px|frameless|right]]
(ক) এদের অধিকাংশই স্বাদু পানির মাছ।<br>
(খ) দেহ সাইকোয়েড ও টিনয়েড উভয় ধরনের আঁইশ দ্বারা আবৃত।<br>
(গ) মাথার দুই পাশে চার জোড়া ফুলকা থাকে। ফুলকাগুলো
কানকো দিয়ে ঢাকা থাকে। ফুলকার সাহায্যে শ্বাসকার্য
চালায়।<br>
'''৪। শ্রেণি- উভচর (Amphibia)'''<br>
মেরুদণ্ডী প্রাণীর মধ্যে যারা জীবনের প্রথম অবস্থায় সাধারণত পানিতে এবং মাছের মতো বিশেষ ফুলকার সাহায্যে
শ্বাসকার্য চালায়, পরিণত বয়সে ডাঙ্গায় বাস করে তারাই উভচর।<br>
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:01.14.JPG|250px|frameless|right]]
(ক) এদের দেহত্বক আঁইশবিহীন।<br>
(খ) ত্বক নরম, পাতলা, ভেজা ও গ্রন্থিযুক্ত।<br>
(গ) এরা শীতল রক্তের প্রাণী।<br>
(ঘ) এরা পানিতে ডিম পাড়ে। এদের জীবনচক্রে সাধারণত ব্যাঙাচি দশা দেখা যায়।<br>
'''উদাহরণ :''' সোনাব্যাঙ, কুনোব্যাঙ।<br>

'''কাজ :''' লইট্যা মাছ, রূপচাঁদা, পোয়া মাছ,
কোরাল মাছ, পাবদা, কৈ, শিং, মাগুর মাছ
সংগ্রহ কর। এগুলো কোন শ্রেণিভুক্ত মাছ।
এদের বৈশিষ্ট্যগুলো শনাক্ত কর।<br>

৫। শ্রেণি- সরীসৃপ (Reptailia)'''
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:01.5.JPG|250px|frameless|right]]
(ক) এরা বুকে ভর করে চলে।<br>
(খ) ত্বক শুষ্ক ও আঁইশয্ক্তু।<br>
(গ) চারপায়ে পাঁচটি করে নখরযুক্ত আঙ্গুল আছে।<br>
'''উদাহরণ :''' টিকটিকি, কুমির, সাপ।<br>
'''৬। শ্রেণি- পক্ষীকূল (Aves)'''<br>
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:01.16.JPG|250px|frameless|right]]
(ক) পাখির দেহ পালকে আবৃত।<br>
(খ) এদের সামনের দু’পা ডানায় ও চোয়াল চঞ্চুতে পরিণত হয়েছে।<br>
(গ) ফুসফুসের সাথে বায়ুথলি থাকায় এরা সহজে উড়তে পারে।<br>
(ঘ) এরা উষ্ণ রক্তের প্রাণী।<br>
(ঙ) পাখির হাড় শক্ত, হালকা ও ফাঁপা।<br>
'''উদাহরণ :''' কাক, দোয়েল, হাঁস।<br>
'''৭। শ্রেণি- স্তন্যপায়ী (Mammalia)'''<br>
'''সাধারণ বৈশিষ্ট্য'''<br>
[[File:01.17.JPG|250px|frameless|right]]
(ক) এদের দেহ লোমে আবৃত থাকে।<br>
(খ) ব্যতিক্রমি স্তন্যপায়ী প্রাণী ছাড়া এরা সবাই সন্তান প্রসব করে।<br>
(গ) উষ্ণ রক্তের প্রাণী।<br>
(ঘ) চোয়ালে বিভিন্ন ধরনের দাঁত থাকে।<br>
(ঙ) শিশুরা মাতৃ দুগ্ধ পান করে বড় হয়।<br>
(চ) হৃৎপিন্ড চার প্রকোষ্ঠবিশিষ্ট।<br>
উদাহরণ : মানুষ, উট, বাঘ।<br>
নতুন শব্দ : বায়ুথলি, নটকর্ড।<br>
'''কাজ : তোমরা পাঁচজনের একটি করে দল গঠন কর। এবার মেরুদন্ডী ও অমেরুদন্ডী প্রাণীদের চার্ট দেখে এদের বৈশিষ্ট্য
নির্ণয় কর ও লিপিবদ্ধ কর। এবার তোমরা শ্রেণিতে উপস্থাপন কর।<br> সকল দলের লেখার বৈশিষ্ট্যের সাথে তোমাদের
লেখার বৈশিষ্ট্যগুলো মিলিয়ে নাও।'''<br>

'''পাঠ ৯'''<br>
লক্ষ লক্ষ প্রাণীকে শনাক্ত করা অসম্ভব ব্যাপার। কেবলমাত্র শ্রেণিবিন্যাসকরণ পদ্ধতি অবলম্বন করে এ কাজটি করা
সম্ভবপর হয়। একটি প্রাণীকে শনাক্ত করতে হলে প্রধানত ছয়টি ধাপে এর বৈশিষ্ট্যগুলো মিলিয়ে নিতে হয়। এ
ধাপগুলো হলো জগৎ (kingdom), পর্ব (Phylum), শ্রেণি (Class), বর্গ (Order), গোত্র (Family), গণ
(Genus) ও প্রজাতি (Species) এই ছয়টি ধাপ লিখলেই চলবে। কিন্তু মানুষ, ব্যাঙ, সাপ, মাছ ইত্যাদি সকল
মেরুদন্ডী প্রাণীর ক্ষেত্রে Phylum বা পর্বের নিচে Sub-Phylum লিখতে হয়।<br>
'''শ্রেণিবিন্যাসের প্রয়োজনীয়তা'''<br>
শ্রেণিবিন্যাসের সাহায্যে পৃথিবীর সকল উদ্ভিদ ও প্রাণী সম্বন্ধে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে সহজে, অল্প পরিশ্রমে ও অল্প সময়ে
জানা যায়।<br> নতুন প্রজাতি শনাক্ত করতে শ্রেণিবিন্যাস অপরিহার্য।<br> প্রাণিকূলের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্কে বিভিন্ন তথ্য ও
উপাত্ত পাওয়া যায়। ধীরে ধীরে প্রাণিকূলের মাঝে যে পরিবর্তন ঘটেছে বা ঘটছে সে সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। অসংখ্য
জীবকূলকে একটি নির্দিষ্ট রীতিতে বিন্যস্ত করে গোষ্ঠীভুক্ত করা যায়।<br> জীবের মধ্যে মিল-অমিলের ভিত্তিতে পরস্পরের
মধ্যে সম্বন্ধ নির্ণয় করা যায়।<br> জীব সম্পর্কে সামগ্রিক ও পরিকল্পিত জ্ঞান নির্ণয় করা যায়।<br> যেমন- সব এককোষী
প্রাণীকে একটি পর্বে এবং বহুকোষী প্রাণীদের নয়টি পর্বে ভাগ করা হতো।<br>
'''এ অধ্যায় পাঠ শেষে যা শিখলাম'''<br>
-কর্ডাটা প্রাণিজগতের কতকগুলো প্রাণী যাদের মধ্যে নটকর্ড, স্নায়ুরজ্জু ও গলবিলীয় ফুলকা ছিদ্র আছে এবং এরা
ভার্টিব্রাটা নামে পরিচিত।<br>
- ভার্টিব্রাটা উন্নত প্রাণী। এদের নটকর্ড শক্ত কশেরুকাযুক্ত মেরুদন্ডে পবিবর্তিত হয়।
- স্নায়ুরজ্জুর সম্মুখ প্রান্ত স্ফীত হয়ে মস্তিষ্কে পরিণত হয়। মস্তিষ্ক করোটির মধ্যে সুরক্ষিত থাকে।<br>
- জলজ ভার্টিব্রাটা ফুলকার সাহায্যে শ্বসন কাজ চালায় আর যারা স্থলে বাস করে তারা ফুসফুসের
সাহায্যে শ্বাসকার্য চালায়।<br>
- মলাস্কা পর্বের প্রাণীদের নরম দেহ ম্যান্টল দ্বারা আবৃত থাকে। মাংসল পা দিয়ে চলাফেরা করে।<br>
- যে সমস্ত প্রাণীকে এদের দেহের কেন্দ্রীয় অক্ষ বরাবর একাধিকবার সমান দুঅংশে ভাগ করা হয় তাকে
অরীয় প্রতিসম প্রাণী বলে। যেমন - তারামাছ।<br>
- বহুকোষী প্রাণীর পৌষ্টিক নালি এবং দেহ প্রাচীরের মধ্যবর্তী ফাঁকা স্থানকে সিলোম বলে।<br>
- দেহ প্রাচীর দিয়ে ঘেরা দেহ গহ্বরকে সিলেন্টেরন বলে। এটা একাধারে পরিপাক ও সংবহনের কাজ করে।<br>
- হিমোসিলের ভিতর দিয়ে রক্ত প্রবাহিত হয়।<br>
- ভ্রূণের যে সকল কোষীয় স্তর থেকে পরবর্তীতে টিস্যু বা অঙ্গ সৃষ্টি হয় তাদের ভ্রূণস্তর বলে।<br>
- প্রাণিজগতে আর্থ্রোপোডা পর্বের প্রাণীদের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। ক্ষতিকর পোকাদের পেষ্ট বলে।<br>

Post a Comment

0 Comments