টেস্টে বাংলাদেশের সেরা ১১ ক্রীড়া প্রতিবেদক |

প্রায় দেড় যুগের টেস্ট অভিযাত্রায় বাংলাদেশের হয়ে টেস্ট খেলেছেন ৮৫ জন ক্রিকেটার। কিন্তু সেই ৮৫ জনের মধ্য থেকে যদি সেরা একাদশ বেছে নিতে হয়? অধিনায়কই-বা হবেন
কে?
প্রথম আলোর অনুরোধে বাংলাদেশের সেরা
টেস্ট একাদশ নির্বাচন করে এই দুই প্রশ্নেরই
উত্তর খুঁজেছেন জাতীয় দলের তিন সাবেক
অধিনায়ক রকিবুল হাসান, গাজী আশরাফ হোসেন ও
ফারুক আহমেদ এবং ধারাভাষ্যকার হিসেবে
বাংলাদেশের বেশির ভাগ টেস্ট দেখা সাবেক
ক্রিকেটার আতহার আলী খান। চারজনের একাদশ
মিলে নাম এসেছে ১৭ জন ক্রিকেটারের।
তিনজনের দলে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, একজন
বেছে নিয়েছেন আমিনুল ইসলামকে।
চার সাবেক ক্রিকেটারের একাদশেই আছেন, এমন
খেলোয়াড় ছয়জন—তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম,
সাকিব আল হাসান, মোহাম্মদ রফিক, মাশরাফি বিন মুর্তজা
ও মোস্তাফিজুর রহমান। অভিষেক টেস্টের দুই
সেঞ্চুরিয়ান আমিনুল ইসলাম ও মোহাম্মদ আশরাফুল
আছেন তিনজনের দলে। সবচেয়ে ‘আধুনিক’ দল
গড়া আতহার আলী খানের একাদশ থেকে বাদ
পড়েছেন এই দুজন। আতহারের ১১ জনের
মধ্যে ৯ জনই বর্তমান টেস্ট দলের। বাইরের শুধু
রফিক ও মাশরাফি।
চারজনের একাদশ থেকে একটি একাদশ গড়তে
চাইলে তাতে এই আট ক্রিকেটারই থাকবেন। জটিলতা
বাকি তিনটি নাম নিয়ে। ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী,
তিন নম্বর ব্যাটসম্যান এবং একজন অফ স্পিনার নির্বাচন
করতে গিয়েই নির্বাচকদের দ্বিধাবিভক্তিটা বেশি।
ওপেনিংয়ে তামিমের সঙ্গী হিসেবে শাহরিয়ার
নাফীসকে রেখেছেন রকিবুল ও গাজী
আশরাফ। ফারুক ও আতহারের পছন্দ আরেক বাঁহাতি
ইমরুল কায়েসকে। শাহরিয়ারকে রাখার পক্ষে
রকিবুলের ব্যাখ্যা, ‘ও খুবই আত্মবিশ্বাসী এবং
ধারাবাহিক একজন ব্যাটসম্যান। টেস্টে তার রেকর্ড
ভালো।’ গাজী আশরাফ বলেছেন, ‘তামিমের
সঙ্গী হিসেবে শাহরিয়ারকে বেছে নেওয়ার
কারণ, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ফতুল্লায় করা ওই
সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের ক্রিকেটের ওই সময়ে
ওরকম অসাধারণ ইনিংস যে খেলতে পারে, তার
অবশ্যই ১১ জনে থাকা উচিত মনে করেছি।’ তাঁর
দলের ওপেনার হতে শাহরিয়ারকে লড়াই করতে
হয়েছে জাভেদ ওমর ও ইমরুলের সঙ্গে।
ফারুক ও আতহার ইমরুলকে নিলেও লড়াইয়ে ছিলেন
শাহরিয়ার। ফারুক শেষ পর্যন্ত গুরুত্ব দিয়েছেন
রানের গড়কে, ‘ওপেনিংয়ে শাহরিয়ার এবং তিন
নম্বরে হাবিবুল ভালোভাবেই আসতে পারত। কিন্তু
রান গড়ে তাদের পেছনে ফেলেছে ইমরুল ও
মুমিনুল।’ তিন নম্বরে মুমিনুলকে নেওয়ার পক্ষে
আতহারের যুক্তি, ‘হাবিবুলকে দলে রাখার আপ্রাণ
চেষ্টা করেছি। কিন্তু মুমিনুলের জায়গায় তাকে
নিতে না পারার কারণ, মুমিনুলের টেস্ট ক্যারিয়ারের
শুরুটা ছিল অসাধারণ।’
তবে গাজী আশরাফ ও রকিবুল দুজনের দলেই
আছেন হাবিবুল। রকিবুল তো হাবিবুলের বিকল্প
কাউকে খুঁজেই পাননি। আর গাজী আশরাফ
বলেছেন, ‘মুমিনুল হকের নামটা একবার উঁকি দিয়েও
হারিয়ে গেছে।’
রকিবুল ও গাজী আশরাফ দল গড়েছেন বাংলাদেশে
খেলা হবে ভেবে। ফারুকের দাবি, তাঁর দলটি
ভারসাম্যপূর্ণ। খেলা কোথায় হচ্ছে, তাতে কিছু
আসে যায় না। আতহারও নির্দিষ্ট কোনো
কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখে দল নির্বাচন করেননি।
তবে বোলিংয়ে বৈচিত্র্য রাখতে চারজনই দুজন
বিশেষজ্ঞ পেসার ও দুজন বিশেষজ্ঞ বাঁহাতি
স্পিনারের সঙ্গে রাখতে চেয়েছেন একজন
অফ স্পিনার। রকিবুলের দলে আমিনুলকে দেখা
যাবে সে ভূমিকায়। গাজী আশরাফের পছন্দ
সোহাগ গাজীকে, ‘মেহেদী হাসান এখন ভালো
করছে। তবু অফ স্পিনার হিসেবে সোহাগকে
নেওয়ার কারণ, যখন বাংলাদেশকে কেউ গোনায়
ধরত না, ওই সময় টেস্ট দলে তার ভালো ভূমিকা
ছিল। ব্যাটিংয়েও তার কাছ থেকে কিছু আশা করা যায়।’
অলরাউন্ডার হলেও গাজী আশরাফের দলে
সাকিবের মূল দায়িত্ব স্পিনার হিসেবে। সাকিবের ব্যাটিং
অর্ডারটাও একটু পেছনেই রেখেছেন তিনি, ‘সাকিব
অলরাউন্ডার হলেও আমি মনে করি, ব্যাটিংয়ে সে
এখনো আস্থার জায়গা তৈরি করতে পারেনি।
ব্যাটিংয়ের প্রতীক হতে পারেনি। এ জন্য তাকে
সাত নম্বরের ওপরে রাখতে পারছি না।’
বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে সবার দলেই আছেন রফিক ও
সাকিব। গাজী আশরাফের দলে দৌড়ে ছিলেন
আবদুর রাজ্জাকও। ফারুক ভাবনায় পড়েছিলেন দলে
একজন তৃতীয় পেসার নেবেন নাকি অফ স্পিনার
নেবেন, এই সিদ্ধান্ত নিতে গিয়ে। শেষ পর্যন্ত
অফ স্পিনই জিতেছে। সে সুযোগে মিরাজ দলে
এলেও ফারুকের মাথায় ছিলেন আরও দুজন, ‘অফ
স্পিনার হিসেবে দলে আসতে পারত নাঈমুর রহমান বা
সোহাগ গাজীও। মিরাজের মতো তাদের
ক্যারিয়ারও ছোট হলেও মিরাজ এখনো খেলছে।
আমি মনে করি, এই সময়ের মধ্যেই ও যে সামর্থ্য
দেখিয়েছে, তাতে বাকি দুজনকে পেছনে
ফেলে দিয়েছে।’
আতহারেরও অফ স্পিনার হিসেবে মিরাজকে পছন্দ।
চারজনের মধ্যে পেস বোলিং অলরাউন্ডারের কথা
ভেবেছেন কেবল ফারুক। কিন্তু মিরাজের
সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে শেষ পর্যন্ত দ্বাদশ
খেলোয়াড় হিসেবে তাঁর দলে জায়গা
পেয়েছেন মোহাম্মদ শরীফ। রকিবুলের দ্বাদশ
খেলোয়াড় মিরাজ, গাজী আশরাফের জাভেদ,
আতহারের দলে হাবিবুল।
উইকেটকিপার হিসেবে মুশফিককে পছন্দ গাজী
আশরাফ, ফারুক ও আতহারের। খালেদ মাসুদকে কিপিং
গ্লাভস দিয়েছেন শুধু রকিবুল। তাঁর ব্যাখ্যা,
‘টেস্টের বিবেচনায় পাইলটের (খালেদ মাসুদ)
ব্যাটিংও ভালো। দরকারে হাল ধরতে পারে।
উইকেটকিপারের এই ব্যাটিংটা বোনাস। মুশফিকুর রহিম
থাকবে বিশেষজ্ঞ ব্যাটসম্যান হিসেবে।’ গাজী
আশরাফ আর ফারুকের নির্বাচনেও উঁকি দিয়ে
গেছেন মাসুদ। ফারুক বলেছেন, ‘টেস্টে আমি
সব সময় বিশেষজ্ঞ খেলোয়াড় নেওয়ার পক্ষে।
সেদিক থেকে উইকেটকিপার হিসেবে খালেদ
মাসুদেরই দলে আসার কথা। কিন্তু ব্যাটিং-বোলিং
সমন্বয় করতে গিয়ে ওকে বাইরে রাখতে
হয়েছে। আমার দলে উইকেটকিপিং করবে
মুশফিক।’
‘অভিজ্ঞতা এবং দূরদর্শী ক্রিকেটীয় চিন্তা’র
কারণে গাজী আশরাফের দলে অধিনায়ক আমিনুল
ইসলাম। বাকি তিনজনেরই মাশরাফি। ২০০৯-এর
জুলাইয়ের পর টেস্ট না খেললেও অসাধারণ
নেতৃত্বগুণের কারণেই তাঁর ওপর আস্থা রাখছেন
রকিবুল, ফারুক ও আতহার। আতহার বলেছেন,
‘অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি সব সময়ই আমার সেরা
পছন্দ।’ রকিবুলেরও তা-ই, ‘মাশরাফি এখন টেস্ট
খেলছে কি না, সেটি বিবেচনায় নিইনি। সাতটি
অস্ত্রোপচারের পরও খেলা চালিয়ে যাওয়ার মানসিক
শক্তি, দল পরিচালনায় দক্ষতা এবং বাংলাদেশ দলে
অবদানের কারণেই সে আমার অধিনায়ক।’
পেস বোলার নির্বাচনে পেছনে ফিরে যাননি
কেউই। সবার দলেই দুই পেসার এবং সে দুজন
মাশরাফি ও মোস্তাফিজ। মোস্তাফিজকে নিতে
গাজী আশরাফের ব্যাখ্যাটাই যেন সবার কথা,
‘মোস্তাফিজের ক্যারিয়ার খুব অল্প সময়ের হলেও
এই সময়েই সে যথেষ্ট দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে।
পেস বোলার হিসেবে তার মধ্যে অনেক কিছুর
সমাহার আছে, যেটা অন্যদের মধ্যে নেই।’
রকিবুল বাড়তি যোগ করেছেন, ‘মোস্তাফিজের
মতো বোলার ১০-২০ বছরে একজন আসে।
ব্যতিক্রমধর্মী বোলিং তার। নিজের দিনে একাই
ম্যাচ জেতাতে পারে।’

Post a Comment

0 Comments