৭ উইকেটের আনন্দ ভুলিয়ে দিচ্ছে ৩ উইকেটের অপেক্ষা

অনলাইন ডেস্ক |

খেলাধুলাঃ চা বিরতির পরের সেশনটা বাংলাদেশেরই মনে
হচ্ছিল। সাকিব আল হাসান তুলে নিলেন তাঁর প্রথম
উইকেট। মোস্তাফিজ তাঁর দ্বিতীয় উইকেট। মনে
হচ্ছিল শ্রীলঙ্কার ইনিংস গুটিয়ে যাওয়াটা সময়েরই
ব্যাপার। ৭ উইকেট পড়ে গেছে, অলআউট হতে
কতক্ষণ! কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩টি উইকেটের
অপেক্ষাতেই কলম্বোর পি সারা ওভালে
নিজেদের শততম টেস্টের প্রথম দিনটা শেষ
করল বাংলাদেশ। দিন শেষ শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৭
উইকেটে ২৩৮।
অষ্টম উইকেট জুটিতে এরই মধ্যে ৪৩ রান উঠে
গেছে। সেই চারে নামা চান্ডিমাল এখনো গলার কাঁটা
হয়ে অস্বস্তির অনুভূতি এনে দিচ্ছেন। প্রস্তুতি
ম্যাচে ১৯০ করা এই ব্যাটসম্যান অপরাজিত আছেন ৮৬
রানে, হেরাথ ১৮ রানে অপরাজিত। তার চেয়ে বড়
কথা খেলেছেন ৬৩ বল। ১৯৫ রানে ৭ উইকেট
ফেলে দেওয়ার আনন্দটা শেষ বিকেলের মরা
আলোর সঙ্গেই যেন মিলিয়ে যেতে
বসেছে।
অথচ শততম টেস্টের প্রথম দিনটা সোনালি
ফ্রেমে বেঁধে রাখার পণই যেন করেছিল
বাংলাদেশ। প্রথম সেশনেই ৭০ রানে ফেলে দিল
৪ উইকেট। দ্বিতীয় সেশনে মাত্র এক উইকেট
নিলেও চা বিরতির পর ১১ ওভারে দুই উইকেট তুলে
নিলে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংস অল্পতেই গুটিয়ে
দেওয়ার পূর্বাভাস জাগিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু
সকালের চেষ্টা ম্লান হয়ে গেল বিকেলে।
সকালে টসে জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরু
থেকেই নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারাতে থাকে
শ্রীলঙ্কা। দলীয় ১৩ রানে মোস্তাফিজের
বলে গালিতে মেহেদী হাসান মিরাজকে ক্যাচ
দেন দিমুথ করুনারত্নে। এরপর মিরাজ তুলে নেন
উপুল থারাঙ্গা ও কুশল মেন্ডিসের উইকেট দুটি।
থারাঙ্গা স্লিপে সৌম্যকে ক্যাচ দেন, মেন্ডিসকে
স্টাম্পিং করেন এক টেস্ট পর উইকেটকিপিংয়ে
ফেরা অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম। লাঞ্চের আগেই
শুভাশিস রায়ের বলে আসেলা গুনারত্নে এলবিডব্লু
হয়ে ফিরলে বড় বিপর্যয়ের মুখেই পড়ে যায়
শ্রীলঙ্কা। এর পরই শুরু চান্ডিমালের জাদু।
শ্রীলঙ্কা এদিন ভাগ্যকে পাশে পেয়েছে।
দিনের চারটি রিভিউই তাদের পক্ষে গেছে। হাফ
চান্সগুলোও বাংলাদেশের মুঠোয় ওঠেনি। চান্ডিমাল
নিজে দুবার বেঁচে গেছেন ভাগ্য বাংলাদেশের
পাশে ছিল না বলে। তবে এতেও বিন্দুমাত্র খাটো
হচ্ছে না লঙ্কান ব্যাটসম্যানের কৃতিত্ব, প্রচেষ্টা।
একপ্রান্ত কীভাবে আগলে রেখে খেলতে
হয়, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের যেন তারই
‘ডেমো’ দিলেন চান্ডিমাল। সারা দিনের আটটি জুটির
ছয়টিতেই আছে তাঁর নাম! চান্ডিমাল আছেন এমন
জুটিগুলোই শ্রীলঙ্কাকে এনে দিয়েছে ২১৪
রান! বাকি কেবল ২৪ রানে অংশীদারি নেই তাঁর!
একের পর এক উইকেট পতনেও হাল ছাড়তে
নেই, টেস্ট ক্রিকেটের এই পুরাতন দীক্ষা নতুন
করে দিলেন চান্ডিমাল। তাঁর কারণেই তৃপ্তির লাঞ্চটা
অস্বস্তির ঢেকুর বানিয়ে দিনের দ্বিতীয় সেশনে
ভোগা শুরু বাংলাদেশের। ৭৯ রান তুলে পাল্টা
আক্রমণের আয়োজন করেছিল শ্রীলঙ্কা।
সেশনটা নিজেদের দিকেই টেনে নিয়েছিল তারা।
যদিও একটি উইকেট তুলে নিয়ে ম্যাচে ফেরে
বাংলাদেশ। ডি সিলভাকে বোল্ড করে তাইজুল
ভেঙেছেন পঞ্চম উইকেটের ৬৬ রানের জুটি।
যা দিনের সর্বোচ্চও।
কিন্তু চান্ডিমাল তাতেও যেন হার মানবেন না। এবার ৪৪
রানের জুটি গড়লেন ডিকভেলাকে নিয়ে। চা বিরতির
পর ষষ্ঠ ওভারে সাকিব নিজের প্রথম উইকেট নিয়ে
ভাঙলেন এই জুটি। ৫ ওভার পর মোস্তাফিজ
ফেরালেন পেরারাকেও। ৭ উইকেট
নেই...বাংলাদেশের এই স্বস্তিটা দ্রুতই অস্বস্তির
খোলসে নিয়ে গেলেন চান্ডিমাল!
বাংলাদেশের সেরা মেহেদী হাসান মিরাজ ও
মোস্তাফিজুর রহমান। মোস্তাফিজ ৩২ ও মিরাজ ৫৮
রানে ২টি করে উইকেট পেয়েছেন। একটি
করে উইকেট শুভাশিস, তাইজুল ও সাকিব আল
হাসানের। দুটি বাজে বলে উইকেট পেয়েছেন
মোস্তাফিজ। কিন্তু সারা দিনে করেছেন দুর্দান্ত
বোলিং। কাল সকালে উজ্জীবিত লড়াই করতে না
পারলে শ্রীলঙ্কার প্রথম ইনিংসের সংগ্রহটা
বিপদের কারণ হতে পারে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কার ১ম ইনিংস: ৮৩.১ ওভারে ২৩৮/৭ (চান্ডিমাল ৮৬* ডিকভেলা ৩৪, ধনঞ্জায়া ৩৪, হেরাথ ১৮*; মোস্তাফিজ ২/৩২, মিরাজ ২/৫৮, তাইজুল ১/৩৪, সাকিব
১/৪৩, শুভাশিস ১/৪৭)।

Post a Comment

0 Comments