বিশ্বকাপ খেলা হয়নি যেসব মহা তারকার - আবু আবদুল্লাহ


জর্জ বেস্ট

বিশ্ব ফুটবলের এ যাবৎ কালের সেরা উইঙ্গারদের একজন হিসেবে বিবেচিত হন জর্জ বেস্ট। নর্দার্ন আয়ারল্যান্ডের এই ফুটবল তারকা ক্যারিয়ারের সেরা সময়টা কাটিয়েছেন ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে (১৯৬৩-১৯৭৪)। ১৯৬৮ সালে ক্লাবটিকে এনে দিয়েছেন ইউরোপিয়ান কাপ। আর নিজে জিতেছেন ইউরোপ সেরা ফুটবলারের খেতাব। ক্লাবটির হয়ে ৩৬১ ম্যাচে গোল করেছেন ১৩৭টি। গোল করার চেয়েও করানোতে তার দক্ষতা ছিল বেশি। তার দৃষ্টিনন্দন ড্রিবলিং প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের বোকা বানাতো বারবার।
ফুটবল ইতিহাসের সেরা খেলোয়াড়দের তালিকা করলে জর্জ বেস্টকে অবশ্যই রাখতে হবে; কিন্তু তার জন্ম এমন একটি দেশে- যে দেশটি বিশ্ব ফুটবলে উল্লেখযোগ্য জায়গা করে নিতে পারেনি।
১৯৮২ ও ১৯৮৬ সালে নর্দার্ন আয়ারল্যান্ড বিশ্বকাপে সুযোগ পেলেও ততদিনে ক্যারিয়ারে সেরা সময়টা পার করে ফেলেছেন জর্জ বেস্ট। তার ওপর ছিল ইনজুরির থাবা। আবার নিয়ন্ত্রণহীন ব্যক্তি জীবনের কারণেও একের পর এক ঝামেলায় জড়িয়ে জাতীয় দল থেকে দূরে থাকতে হয়েছে অনেক দিন। যে কারণে এই গ্রেট ফরোয়ার্ডের খেলা হয়নি বিশ^কাপ আসরে।
তবে জাতীয় দলের হয়ে ৩৭ ম্যাচ খেলেছেন বেস্ট, গোল করেছেন ৯টি।

আলফেড্রো ডি স্টেফানো

আরেক দুর্ভাগা মহা তারকার নাম আলফ্রেডো ডি স্টেফানো। বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার, চমৎকার পারফরম্যান্স- সবই ছিল তার। আবার জন্ম হয়েছিল আর্জেন্টিনার মতো ফুটবল-পাগল দেশে। আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলেছেন আর্জেন্টিনা ও স্পেনের মতো দুটি শক্তিধর দলের হয়ে। তবুও বিশ্বকাপ খেলা হয়নি তার। বিশ্লেষকরা বলেন, সঠিক সময়ে সঠিক জায়গাটিতে ছিলেন না স্টেফানো। যে কারণে তার পা পড়েনি বিশ্বকাপের মাঠে।
১৯৪৭ সালে তার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু হয়। ৬টি ম্যাচ আর্জেন্টিনার জার্সি গায়ে খেলার পর তিনি কলম্বিয়ার হয়ে খেলতে শুরু করেন। ওই সময় অনিয়মের কারণে কলম্বিয়া ফিফার স্বীকৃতি পায়নি। অবশ্য ১৯৫০ ও ১৯৫৪ সালের বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনা বাছাই পর্ব পার হতেও পারেনি।
১৯৫৩ সালে স্প্যানিশ ক্লাব রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেন স্টেফানো। এরপর স্পেনের নাগরিকত্ব নিয়ে আন্তর্জাতিক ফুটবলেও স্পেনের হয়ে খেলতে শুরু করেন। ১৯৬৪ সাল পর্যন্ত খেলেছেন রিয়ালের হয়ে। ২৮২ ম্যাচে গোল করেছেন ২১৬টি। যা যেকোনো বিচারে সেরা নৈপুণ্য; কিন্তু দুর্ভাগ্য তার বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ আসেনি।
১৯৫৮ বিশ্বকাপের বাছাইপর্বে স্পেনের হয়ে অংশ নিয়েছিলেন; কিন্তু সুইজারল্যান্ডের কাছে হেরে স্পেনের বিশ্বকাপ খেলার স্বপ্ন ভেঙে যায়। পরে ১৯৬২ সালে স্পেন বিশ্বকাপে সুযোগ পেলেও ইনজুরির কারণে দলে থাকতে পারেননি। ওই ঘটনার পরই আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন এই ফরোয়ার্ড।
১৯৫৭ ও ১৯৫৯ সালে ইউরোপের সেরা ফুটবলার হিসেবে ব্যালন ডি’অর জেতেন স্টেফানো। ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সাথে যৌথভাবে এল ক্লাসিকোর সর্বোচ্চ গোলদাতা তিনি। রিয়াল মাদ্রিদের হয়ে ৮টি লা লিগা ও ৫টি ইউরোপিয়ান কাপের শিরোপা জিতেছেন এই গ্রেট ফুটবলার।

রায়ান গিগস

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের আরেক সেরা ফুটবলার রায়ান গিগস। দীর্ঘ ক্যারিয়ারে জিতেছেন ৩৪টি ট্রফি; কিন্তু দুর্ভাগ্য তার, কখনো খেলতে পারেননি বিশ্বকাপের আসরে। জন্ম তার ওয়েলসে। ইংল্যান্ডের বয়সভিত্তিক দলে খেলতেও শুরু করেছিলেন; কিন্তু মাতৃভূমির প্রতি ভালোবাসা তাকে ওয়েলসের হয়ে খেলতে উদ্বুদ্ধ করে।
শুরু থেকেই প্রতিভার ঝলক দেখিয়েছেন ক্লাবের হয়ে। যে কারণে বয়স ১৮ বছর পূর্ণ হওয়ার আগেই আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পান ওয়েলস জাতীয় দলের হয়ে।

ক্লাব ক্যারিয়ারের পুরোটা সময় কাটিয়েছেন ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের হয়ে (১৯৯০-২০১৪)। ক্লাবটির হয়ে ৬১৭ ম্যাচ খেলেছেন। ১২২টি গোলও করেছেন এই মিডফিল্ডার। ক্লাবটির হয়ে ১৩টি লিগ শিরোপা, দুটি চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপা ও একবার ক্লাব বিশ্বকাপ জিতেছেন; কিন্তু এতকিছু করা সত্ত্বেও কখনো বিশ্বকাপ খেলা হয়নি গিগসের।
তার ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে ১৯৯৪ সালের বিশ্বকাপের খুব কাছে গিয়েও শেষ পর্যন্ত বাছাইপর্ব পার হতে পারেনি ওয়েলস। এরপর দলটি আর কখনোই বিশ্বকাপে খেলতে পারেনি।
তবে এত বছর পর এবারের কাতার বিশ্বকাপে মূলপর্বে খেলার সুযোগ পেয়েছে ব্রিটেনের অংশ ছোট্ট এই দেশটি। ইতিহাসে তারা একবারই মাত্র বিশ^কাপ খেলেছে, সেটা ১৯৫৮ সালে।

জর্জ উইয়াহ

আফ্রিকা মহাদেশ থেকে উঠে আসা ইতিহাসের সেরা ফুটবলারদের একজন জর্জ উইয়াহ। প্রথম আফ্রিকান হিসেবে ব্যালন ডি’র জিতেছেন তিনি।
ফ্রান্সের ক্লাব মোনাকো দিয়ে ইউরোপের ফুটবলে পদচারণা তার। এরপর প্যারিস সেন্ট জার্মেইতে কয়েক মৌসুম কাটানোর পর তাকে কিনে নেয় ইতালির এসি মিলান। ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগের ক্লাব চেলসি ও ম্যানচেস্টার সিটিতেও খেলেছেন দুটি মৌসুম।

লাইবেরিয়া জাতীয় দলের হয়ে খেলেছেন দীর্ঘদিন। ১৯৮৭ থেকে ২০০২ সাল পর্যন্ত ৬০টি আন্তর্জাতিক ম্যাচে করেছেন ২২ গোল। ক্লাব ফুটবলে এসি মিলানের হয়ে করেছেন ৪৬ গোল। ফুটবল বিশ্বে লাইবেরিয়া ছোটো দল হিসেবেই পরিচিত। এই দলটি যেটুকু সাফল্য পেয়েছে উইয়াহর হাত ধরেই। তিন বার আফ্রিকা মহাদেশের সেরা ফুটবলার নির্বাচিত হয়েছেন উইয়াহ। আফ্রিকার গত শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড়ের মুকুটও উঠেছে তার মাথায়।
তবে দলটি কখনো বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ না পাওয়ায় এই সুপারস্টারও বঞ্চিত হয়েছেন ফুটবলের সেরা আসরে খেলার সুযোগ থেকে।
আরেকটি কথা জানিয়ে রাখি, এই ফুটবল তারকা বর্তমানে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট। খেলা থেকে অবসরের পর রাজনীতিতে যোগ দেন উইয়াহ। ২০১৭ সালের নির্বাচনে জিতে দেশটির ২৫তম প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নেন।

সোর্সঃ কিশোরকন্ঠ

Post a Comment

0 Comments